খুলনায় আজকের দিনের কার্যক্রম প্রায় শেষে প্রথম কাজ হিসেবে যেটা মাথায় আসলো তা হলো এখানের প্রখ্যাত মিষ্টির দোকানের মিষ্টি ট্রাই করতে হবে। যাকেই জিজ্ঞাসা করি খালি নতুন আলিশান মিষ্টির দোকানের রেফারেন্স দেয়। তাই অনলাইন এ বিচরাইয়া দেখলাম কি আসে। অত:পর চোখে আসলো “ইন্দ্রমোহন সুইটস”। আর চোখে আসলে কি তা এক্সপ্লোর না করলে চলে!!! সন্ধ্যা করেই ঘুরে এলাম তাদের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির দোকান। খেলাম ছানা আর রসগোল্লা। সব থেকে মজার ব্যাপার মিষ্টি খেতে চামচ দেয় না!! হাত দিয়েই চেখে খেতে হবে।
১৩৪ বছর এর ইতিহাসের ভার নিয়ে এখনো টিকে আছে আলিশান সব মিষ্টান্ন ভান্ডারের সাথে অসম যুদ্ধ চালিয়ে রেখে। একদম কিছু দিন আগেই তারা তাদের ঐতিহ্যবাহী দোকান ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। তবু খিলনাবাসীর ভালোবাসা নিয়ে আবার শুরু করে পথ চলা। নতুন স্থানে আগের থেকে ভীর কমে গেলেও এখনো শহরের ইন্দ্রমোহন ভক্ত ও আমার মত খুজে বের করা @যাত্রিক এর কল্যানে টিকে আছে খুলনার বড়বাজারে।
ইন্দ্রমোহন সুইটসের শুরুটা হয়েছিল খুলনা অঞ্চলের হেলাতলা রোডের এক গোলপাতার ঘরে, ১৮৯০ সালে। সাতক্ষীরার সন্দেশ, বগুড়ার দই, কিংবা কুমিল্লার রসমালাইয়ের মতো অঞ্চলের নাম গেঁথে যায়নি ইন্দ্রমোহনের মিষ্টির সাথে। যার ফলে দোকানটির মৌলিকত্ব টিকে রয়েছে জোরালোভাবে, গজিয়ে ওঠেনি অসংখ্য শাখা-প্রশাখা। তাই এখনো খুলনা শহরের ঐতিহ্যের কথা বলতে হলে সবার আগে সগৌরবে উঠে আসে প্রতিষ্ঠাতার নাম, ‘ইন্দ্রমোহন!’
ইন্দ্রমোহন সুইটসের শুরুটা হয়েছিল হেলাতলা রোডের এক গোলপাতার ঘরে। ২০১৯ সাল পর্যন্তও হলুদরঙা দেয়ালের ওপর নীলরঙা টিনের সাইনবোর্ডে সাদা অক্ষরে লেখা জ্বলজ্বলে ‘ইন্দ্রমোহন সুইটস’-এ ভিড় জমাতো মিষ্টিপ্রিয় খাদকরা। দূর-দূরান্ত থেকে খুলনার এই ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির স্বাদ নিতে বড়বাজারে ঢুঁ মারতো সাধারণ ব্যক্তি থেকে বিখ্যাত ব্যক্তিরাও।
২০১৯ সালের জুন মাসের ৩০ তারিখ বন্ধ হয়ে যায় হেলাতলা রোডের ১০ নম্বর বাড়িতে থাকা ‘ইন্দ্রমোহন সুইটস’। বহুবার হাত বদল হওয়া বাড়িটির মালিক সেলিনা হক বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্দেশ্যে দোকানটি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবে প্রায় ১৩০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঐ জায়গা থেকে যেতে চাননি তারা। দীর্ঘ ১৮ বছরের মামলা লড়ে অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশে দোকানটি ছেড়ে যেতে বাধ্য হন তারা।
এদিকে স্থানীয় ব্যক্তিরা খুলনার এই ঐতিহ্যকে হারিয়ে যেতে দেননি। এক-দেড় মাসের মধ্যেই দোকানটির মূল অবস্থান থেকে সামান্য দূরে হেলাতলা জামে মসজিদের পাশেই ১৭ নম্বর হেলাতলা রোডের নিচতলায় জায়গা পেয়েছেন তারা। জায়গা বদলালেও কারিগর বা মিষ্টি তৈরির প্রক্রিয়ার বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি, পরিবর্তন হয়নি মিষ্টির স্বাদেও।
লোকেশনঃ https://maps.app.goo.gl/rwxXseuBUr7s6XiY8
**তথ্য সহায়তায় : ইন্টারনেট, TBS