আমার ধারনা ও জানা মতে, Louvre Museum এ ভ্রমন কালের দর্শনার্থিদের আগ্রহ সব থেকে বেশী যে আর্টিফেক্টটির জণ্য থাকে, তাতে মোনালিসার পর এই এই মমিটির (মমি ওফ পাচেরি) অবস্থান।
অনেক অনেক ইজিপশিয়ান নিদর্শনের মধ্যে এটিও রয়েছে তার নিজস্ব অসীম এক ঘুমের মধ্যে। এই মমিটি খুবই অনন্য একটি মমি, সম্ভবত অন্য কোথাও দেখা অন্য কোনও মমির সাথে এর কোন মিল নেই। আমার Department of Egyptian Antiquities of the Louvre ভ্রমন এর সময় আমি যখন অনেক অনেক মমি দেখার আশা নিয়ে প্রবেশ করলাম, হঠাত টের পেলাম অনেক কফিন ও অনন্য নিদর্শনের মাঝে এই পাচেরি মহাশয় এক অদ্ভুত ও আকর্ষনীয় নিদর্শন।
লুভরের এই প্রাচীন মিশরীয় মমিটির মুখটি অস্বাভাবিক অভ্যন্তরীণ ভাবে বোনা বর্গক্ষেত্রকৃতি ছাঁচ দ্বারা আবৃত। লুভের মমিটি তার মাথা মোড়কের মন্ত্রমুগ্ধকর জটিলতার কারণেই অনেক বেশী আকর্ষণীয় হয়ে ঊঠেছে, যা স্বভাবতই আমরা আগে দেখিনি। যাদুঘরের প্রতিবেদন হিসাবে, এক্স-রে তে দেখা গেছে যে এটি প্রায় প্রাপ্তবয়স্ক ১.৬৫ মিটার লম্বা একজন ব্যক্তির মমি ও এটি টলেমাইক পিরিয়ডের বলে ধারনা করা হয়। গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে মমিকৃত ব্যক্তির নাম নেনু বা পাচেরি ছিল, যদিও এটি অনিশ্চিত। তিনি যে ভাবে সংরক্ষিত ছিলেন তা থেকেই বোঝা যায় যে, তাঁর নাম যাই হোক না কেন, তিনি তাঁর নশ্বর জীবনে অনেক ভাগ্যবান ও ছিলেন।
নেনু বা পাচেরি যাই নাম হোক না কেনো, তিনি সম্ভবত উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। মমিকরন এর সময় তার হৃদয় এবং মস্তিষ্ক ব্যতীত বাকি অভ্যন্তরীণ প্রতাঙ্গগুলি জারে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। যা মমিটির পাশেই সংরক্ষিত আছে। পরবর্তীতে মমি করন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেহটি শুকানোর জন্য লবনের সাহায্যে প্রকৃয়াজাত করে পরে লিনেন কাপড়ের স্ট্রাইপে জড়ানো হয়েছে। মমির অসাধারণ নেকব্যান্ডটিতে দুই দেবী বোন নেফথিস এবং আইসিসকে চিত্রিত করা আছে, যারা মমিটির রক্ষক হিসাবে দাঁড়িয়ে আছেন। মমির প্রত্যঙ্গগুলোর জার ও একইভাবে অন্য প্রধান মিশরীয় দেবতা হুরাস এর প্রতিক দ্বারা সুরক্ষিত।
পাচেরির মমির পায়ের কাছে কবরস্থান এবং মৃতদেহের দেবতা অনুবিস বা আনপু এর প্রতিক লক্ষ্য করা যায়। তখন বিশ্বাস করা হতো শেয়াল মুখি হিসেবে চিত্রিত এই দেবতা মৃত ব্যক্তির হৃদয়ের ওজন মাপতেন ও আত্মাকে মৃতের রাজ্যে প্রবেশের অনুমতি দিতেন।
ক্ষমতাধর তুতেনখামেন হোক বা কোন ফারাও এর মমি হোক। এতো সুন্দর ও গোছানো মমি আমি চোখে বা টিভিতেও দেখে উঠেনি। এটি The Louvre Mummy হিসেবেই এখন বেশী পরিচিত। পাচেরি বা নেনু হিসেবে তাকে ইতিহাস চিনলেও আমার মত সাধারন মানুষের কাছে সে লুভের মমি হিসেবেই থাকবে।