ফরিদপুর জেলায় গেলে ভ্রমন পিপাসুদের জন্য অবশ্যই একটি অন্যতম আকর্ষণ এর নাম মথুরাপুর দেউল (Mathurapur Deul)।
এটি ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলায় অবস্থিত একটি দেউল বা মঠ। ধারনা মোতাবেক এই প্রত্নতাত্ত্বিক অবকাঠামোটি আনুমানিক ষোলশো শতাব্দীতে তৈরি করা হয়েছিলো বলে ধারণা করা হয়, তবে কারো কারো অনুমান এটি সপ্তদশ শতকের স্থাপনা হয়ে থাকতে পারে।
এই দেউলটির অন্যতম অভিনব দিক হচ্ছে এই দেউলটি বারো কোন বিশিষ্ট এবং মাটি থেকে প্রায় ২১.২ মিটার উঁচু। ওই স্থাপনার ভিতরে শুধু মাত্র একটি ছোট কক্ষ রয়েছে, যা একদম স্থাপনার ছাদ পর্যন্ত লম্বা। আধার ঘেরা এই কক্ষে প্রবেশ করলে একটা অন্যরকম অনুভূতি গ্রাস করে। হঠাৎ মনে হয় উপর থেকে একটা অপেক্ষার প্রহর নিচে নেমে আসতে চাইছে। অবশ্য দেউলের ভেতরে প্রবেশ না করাই ভালো। স্যাঁতস্যাঁতে অন্ধকারাচ্ছন্ন এই কক্ষে সাপের আনাগোনার সম্ভাবনা প্রবল।
এর গঠন প্রকৃতি অনুসারে একে মন্দির বললে ভুল হবে না৷ এটি একটি রেখা প্রকৃতির দেউল৷ ষোড়শ শতাব্দীর স্থাপনা গুলোর মধ্যে মথুরাপুর দেউল সম্ভাবত একমাত্র রেখা প্রকৃতির দেউল৷ দেউলটিতে দুইটি প্রবেশ পথ আছে, একটি দক্ষিণ মুখী অন্যটি পশ্চিম মুখী৷ এছাড়া আরেকটি দিকে একটি বদ্ধ প্রবেশমুখ ন্যায় বৈশিষ্ট্য চোখে পরে (আমার পূর্বের পোস্টকৃত ছবি তে দৃশ্যমান)।
এটি তৎকালীন ভবনগুলোর মধ্যে একমাত্র বারো কোণবিশিষ্ঠ কাঠামো। বারোটি কোণ থাকায় উপর থেকে দেখলে এটিকে তারার মত দেখা যায় ৷ দেউলটির উচ্চতা ৮০ ফুট৷ পুরো স্থাপনা জুরে টেরাকোটার জ্যামিতিক ও বাহারী চিত্রাংকণ রয়েছে৷ রামায়ন কৃষ্ণলীলার মত হিন্দু পৌরাণিক কাহীনির চিত্র, গায়ক, নৃত্যকলা, পবন পুত্র বীর এবং যুদ্ধচিত্রও এই দেউলের গায়ে খচিত রয়েছে৷ প্রতিটি কোনের মাঝখানে কৃত্তিমূখা স্থাপন করা রয়েছে৷ তবে দেউলটির কোথাও কোন লেখা পাওয়া যায়নি৷ বাংলার ইতিহাসে এর নির্মাণশৈলী অনন্য বৈশিষ্ঠ বহন করে৷ এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একটি সুরক্ষিত সম্পদ৷
[তথ্য সহায়তায় : প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, উইকিপিডিয়া ও স্থানীয় সূত্র]